ভূত শংকর


ভূত শংকর

লেখকঃফেরদৌস ওয়াহীদ

রাতে বন্ধুদের সাথে অাড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরছিলো মামুন।রাত প্রায় সাড়ে ১০ টা বাজে।মামুনদের বাসায় যাওয়ার সময় পথে ছোটখাট একটা শ্বশান অাছে।মামুন কখনো সেটা নিয়ে ভয় পেতোনা।তাই সে স্বাভাবিক ভাবেই শ্বসানটি পার হচ্ছিলো।কিন্তু হঠাৎ পথে একটি বড় সড় সাপ দেখতে পেয়ে একটু ঘাবড়ে যায় মামুন ।সাপটি রাস্তা থেকে সরছিলোনা দেখে মামুন ছোট খাটো একটা ঢিল মারে সাপটির দিকে।ঢিল সাপের গায়ে লাগতেই মামুন খেয়াল করলো, সাপটি রাস্তা থেকে সরে না গিয়ে ধুপ করে উধাও হয়ে গেলো।মামুন এবার অারো বেশি ঘাবড়ে গেলো।সাথে একটু ভয়ও লাগতে শুরু করলো।দাদুর কাছে শুনেছিলো জ্বিনেরা নাকি রাতের বেলা মাঝে মাঝে সাপের রুপ ধারণ করে ঘোরা ফেরা করে।এটা মনে পড়তেই মামুন ভয়ে ভয়ে সেখান থেকে দ্রুত বাসায় চলে অাসলো।কিন্তু বাসায় এসেও শান্তি পাচ্ছেনা।উশ খুশ করতে লাগলো মামুন।ঘেমে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।মামুনের মা অামেনা বেগম মামুনের এ অবস্থা দেখে দ্রুত কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো,কিরে তোর এই অবস্থা কেনো?এত ঘামছিস কেনো?

মামুন তার মায়ের প্রশ্নের জবাবে একটু অাগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা খুলে বল্লো।কিন্তু তার মা ব্যপারটাকে এত পাত্তা না দিয়ে বলে মানুষ অনেক সময় চোখের ভুলেও অনেক কিছু দেখে।এত ভয় পাওয়ার কিছু নাই।কিন্তু মামুন তখনো জানতোনা অাজকে রাতে তার সাথে কি হতে চলেছে। সেই রাতটা মামুনের জন্য ছিলো প্রচন্ড ভয়াবহ।রাতে ঘুমাতে গিয়েও ঘুমাতে পারছিলোনা।এপিঠ ওপিঠ করতে করতে যখন রাত ২ টা তখন হঠাৎ মামুন দেখতে পায় তার রুমে সিলিং ফ্যানের সাথে একটা লাশ ঝুলছে।লাশটির বিভৎস চেহারা অার মুখ দিয়ে অনবরত রক্ত পড়ছে অার মামুনের দিকে তাকিয়ে হাসছে।মমাুন ভয়ে চিৎকার দিতে গিয়ে দেখলো গলা দিয়ে অাওয়াজ বেরোচ্ছেনা।অাবার জানালার দিকে চোখ পড়তেই দেখলো অারো একটা বিভৎস চেহারার লাস জনালা দিয়ে লাল চোখে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। মাুনের যেনো ভয়ে হৃদপিন্ড বেরিয়ে অাসে।কোন মতে হাতের কাছে থাকা বেড সুইচ অন করতেই দেখলো পুরো ঘরে দেওয়ালে দেওয়ালে রক্ত মাখা,অার চারপাশ থেকে অাত্না কাঁপানো চিৎকার এর অাওয়াজ অাসছে।এবার মামুন ভয়ে অজ্ঞানই হয়ে গেলো।সকাল বেলা মামুনকে ডাকতে এসে অামেনা বেগম দেখতে পান ছেলের হাতে পায়ে অনেক গুলো দাগ দেখতে পায়।এ অবস্থা দেখেই তাড়াতাড়ি মামুনকে ডেকে তুলে রাতের কথা জিজ্ঞাস করতেই মামুন রাতের সব ঘটনা খুলে বলে।দেরি না করে মামুনকে এলাকার বড় মসজিদের হুজুরের কাছে নিয়ে যান অামেনা বেগম।কথিত অাছে এই হুজুর নাকি এই রকম অনেক বড় বড় জ্বিন গত সমস্যা সমাধান করেছিলেন।এবং তিনি নাকি জ্বিনও পালেন।মামুনকে সেই হুজুরে কাছে নিয়ে যাওয়া হলে হুজুর বল্লো মামুন যেই সাপটিকে ঢিল মেরেছিলে সেটি অাসলে ছিলো একটা জ্বিন। অার সেই ঢিল নিক্ষেপের প্রতিশোধ নিতেই সেই জ্বিনটির সাথে তার অারো ২ ভাইও মামুনের ওপর ভর করেছে।সব শুনে মমাুনের মায়ের যেনো প্রানটা বেরিয়ে যায়।চোখের সামনে অাদরের একমাত্র ছেলের এ অবস্থা শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।এ অবস্থায় হুজুর মামুনকে বলেন অামি তোমাকে কিছু অামল করতে দিবো।অার সেটা তোমাকে করতে হবে একটা জঙ্গলে।যদি ভয় পাও তবে সমস্যা অারো বাড়বে অার যদি নিজেকে শক্ত রাখতে পারে তবে সারা জিবনের জন্য এসব বদ জ্বিনের হাত থেকে ছাড়া পাবে।সব শুনে মামুন কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।মামুনের মা তো কোন মতেই রাজি না।ভেবে চিন্তে বল্লো অামার একদিন সময় চাই।হুজুর সম্মতি দিলো।সেদিন বাসায় গিয়ে অনেক ভেবে চিন্তে মামুন সিদ্বান্ত নিলো সে যাবে।মামুনের বাবাও রাজি।কিন্তু বাধ সাধলো তার মা।কোনভাবেই বুঝানো যাচ্ছিলোনা।অবশেষে অনেক বুঝানোর পর তিনিও রাজি হন।রাতটা কোনমতে পার করে পরদিন বিকালে হুজুরের সঙ্গে মামুন চললো সেই জঙ্গলে ।হুজুরজঙ্গলে মাঝে হালকা একটু খোলামেলা জয়গায় কিছু দোয়া পড়ে হাতের লাঠি দিয়ে একটা বড় সড় বৃত্ত এঁকে মামুনকে বল্লো এই জঙ্গলে কোন শিয়াল কুকুর বা বাঘ নেই।অার তুমি অামলগুলো করার সময় ওই ৩ জ্বিন এসে মায়া কান্না করবে,বাঘের ভয় দেখাবে,অাত্তচিৎকার করবে।এসব করে ভয় দেখিয়ে বা যে করেই হোক তোমাকে এই বৃত্ত থেকে বের করার চেষ্টা করবে।কিন্তু যত কিছুই করুক তুমি বের হবেনা।বের হলে ওরা তেমাকে হত্যাও করতে পারে।অার যেই অামগুলো দিলাম সেগুলো কমপক্ষে ১০০ বার পড়তে হবে।এসব দিক নির্দেষনা দিয়ে হুজুর চলে গেলো।উপরে উপরে সাহস দেখালেও ভেতরে ভেতরে মমুন ভয় পাচ্ছিল।রাত বাড়ার সাথে সাথে ভয়টা যেনো অারো প্রকোপ হতে শুরু করলো।প্রায় রাত ২ টা পর্যন্ত অামল চালিয়ে গেলো সে।কিন্তু হঠাৎ জঙ্গল থেকে অাত্না কাঁপানো প্রচন্ড এক চিৎকার এর অাওয়াজ শুনে মামুনের যেনো ভয়ে কলজে শুকিয়ে যায়।তাই গুটি শুটি মেরে পকেটে হাত ঢুকিয়ে বসে পড়লো।পকেটে হাত পড়তেই দেখলো মোবাইল অার মিনি সাউন্ড বক্সটা এখনো পকেটেই রয়ে গেছে।এগুলো দেখে মাথায় একটা বুদ্বি অাসতেই এত ভয়ের মাঝেও কিঞ্চিত হাসি পেলো মামুনের।ব্লুটুথ এ মোবাইলের সাথে সাউন্ড বক্স কানেক্ট করেই ছেড়ে দিলো জোরসে একটা dj গান।এবার যেনো হাঁসিই পাচ্ছে তার।ভাবা যায়!যেখানে নাকি কিচুক্ষন পরে ভুতেরা তাকে ভয় দেখাতে অাসবে সেখানে সে সাউন্ড বক্সে dj গান শুনছে!এরই মাঝে দেখতে পেলো ৩ টা কালো ছায়া তার বৃত্তের উপরে ঘুরে ঘুরে উড়ছে।মাুমুন সেটা দেখে ভয়ে দাড়িয়ে গেলো।শুনতে পেলো কালো ছায়া গুলো হাঁসছে।ভয়ানক ভাবে হাঁসছে।কিন্তু সেসব শুনেও কেনো যেনে মামুন ভয় পাচ্ছেনা।উল্টো হাসি পাচ্ছে।এদিকে ফুল সাউন্ডে কামারিয়া গানটি চলছে সাউন্ড বক্সে।ধিরে ধিরে গানের তালে তালে মামুন নাচতেও শুরু করেছে।সেকি মাচ মামুনের।ভালোভাবে নাচ জানেনা তাই হাত পা ছড়া ছড়ি অার লাপ ঝাপ দিয়েই উল্টা পাল্টা নাচতে লাগলো। তার এই পাগলা নাচ দেখে ভুতগুলাও যেনো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।মামুন খেয়াল করলো ছায়াগুলো মানুষের রুপ নিয়ে অাবুলের মতো অবাক চোখে মামুনের দিকে তাকিয়ে অাছে।ওরা যেনো বুঝতেই পারছেনা অাসল হচ্ছেটা কি এখানে।ওরা অাসলো ভয় দেখিয়ে মামুনকে বৃত্তটি থেকে বের করতে অার ও ফুল সাউন্ডে গান ছেড়ে দিয়ে পাগলা নাচ শুরু করে দিয়েছে।ভাবা যায় এগুলা!!ভুত নিজেই যেনো কনফিউজড।এ অবস্তায় কি করা উচিত জ্বিনগুলো যেনো নিজেই বুঝতে পারছেনা।ওদের এ অবস্থা দেখে মামুনের যেনো অারো বেশি হাসি পায়।কিন্তু এভাবে ১ ঘন্টা চলার পর ক্লান্ত হয়ে যায় মামুন।বসে পড়ে মাটিতে।এদিকে সাউন্ড বক্সেরও চার্জ প্রায় শেষ।জ্বিনেরা যেনো এবার একটু খুশিই হলো।ওরা ইতি মধ্যে নানান রকম ভয়ঙ্কর রুপ নিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু মামুন যেনো ভয়ই পাচ্ছেনা।কিছুক্ষন ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে এবার মোবাইল থেকে গান ছেড়ে দিয়ে মাটিতেই শুয়ে পড়লো।ক্লান্ত সে।এদিকে মামুনের কোন ভাবন্তর না দেখে জ্বিনেরা যেনো বিরক্তই হয়ে গেলো।এই ছেলের কি কোন ভয় ডর নেই নাকি!এভাবে চলতে চলতে বেজে গেলো ভোর ৫ টা।চারদিকে অাজান শুরু হতেই দেখা গেলো জ্বিনেরা বাতাসের গতিতে সেখান থেকে ছুটে চলে গেলো।মামুন এবার খুব বেশিই ক্লান্ত।সেখানেই ঘুমিয়ে পড়লো।সকাল ১১টার দিকে ঘুম ভাংতেই নিজেকে নিজের বিছানায় অাবিষ্কার করলো।দেখলো তার মা বাবা অাত্নিয় স্বজন সহ সেই হুজুরও তার রুমে প্রবেশ করছে।সবার একটাই প্রশ্ন, রাতে কি হয়েছিলো তার সাথে?মামুন তাদেরকে ঘটনা খুলে বলতেই যেনো সবার মাঝে হাসির রোল পড়ে গেলো।হাসি যেনো থামছেইনা।হুজুরও হাসছে।অবশেষে হুজুর বল্লো তুমি মুক্ত এখন থেকে।ভবিষ্যতে এভাবে কোন কিছুকে না বুঝেই অাঘাত করোনা।

(সমাপ্ত)



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ